প্রকাশিত: ২৪/০২/২০১৭ ১০:২১ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::

দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার অঞ্চলে সাংবাদিকতা করছেন তোফায়েল আহমেদ৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটা অংশ কিভাবে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে৷

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা কী ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে?

তোফায়েল আহমেদ : বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা এমন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করছেন না৷ খুন-খারাপি, চুরি-ডাকাতি, এমনকি জঙ্গিবাদেও জড়িয়ে পড়ছেন তারা৷ রোহিঙ্গাদের প্রতি মানুষের আগে যে ভালোবাসা ছিল, আন্তরিকতা ছিল, তাতে এখন ভাটার টান৷ অব্যাহত অপরাধের কারণে লোকজন এখন তাদের সহ্য করতে পারে না৷ আমরা এমনটাও শুনেছি, খুব শিগগিরই কক্সবাজারের মানুষ তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছেন৷ এই আন্দোলনটা হলো তাদের নোয়াখালির ঠ্যাঙ্গারচরে স্থানান্তরের যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে সেটা যেন দ্রুত করে৷

ডয়চে ভেলে: কোন ধরনের জঙ্গিবাদের কথা বলছেন, যাতে এদের সম্পৃক্ততা আছে?

তোফায়েল আহমেদ : মূলত বাংলাদেশিদের রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি তাদের সমর্থন নেই৷ তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে না৷ তারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে৷১৯৭১ সালে ভারত আমাদের যেভাবে সমর্থন দিয়েছিল, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ মুসলিম অধ্যুষিত হওয়ার পরও তারা আমাদের সমর্থন দেয়নি৷ সেখানে যারা গিয়েছিল, তারা আশ্রয় পায়নি৷ তারা আমাদের প্রতি দয়া-মায়া দেখায়নি৷ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)-র সঙ্গে জঙ্গি কানেকশন আছে বলেই আমরা জানি৷

ডয়চে ভেলে: আইএস-এর মতো কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে এদের সম্পৃক্ততা আছে?

তোফায়েল আহমেদ : তাদের আইএস-এর সঙ্গে যোগাযোগ আছে কিনা, সে ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে৷ তবে রোহিঙ্গাদের বিশাল একটা জনগোষ্ঠী দেশের বাইরে অবস্থান করে৷ তারা এই ধরনের উগ্র জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে৷ আমরা তো এপার থেকে এমন কথাও শুনেছি যে, রাখাইনে সেনাবাহিনীর উপর যে হামলা হয়েছে, তার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ থেকে ৭০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছিল৷

ডয়চে ভেলে: এরা যে অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে এর পেছনে মূল কারণটা কী? শুধুই কি জীবিকা নির্বাহ, না অন্য কিছু?

তোফায়েল আহমেদ : একমাত্র জীবিকার জন্য তারা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে, এমনটি নয়৷ বরং অপরাধ করলে তাদের এখানে জীবিকার নিশ্চয়তা থাকে না৷ অথচ অপরাধ না করলে তারা স্বাভাবিকভাবেই জীবিকা নির্বাহ করতে পারত৷ আসলে ওদের জেনারেশনের পর জেনারেশন অপরাধে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ আমরা আব্দুল হাকিম নামে এমন একজন অপরাধীর নাম জানি, যিনি ডাকাতি দিয়ে পেশা শুরু করেছিলেন, এরপর খুন ও চুরি-ডাকাতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন৷ তিনি তো মধ্যপ্রচ্যের জঙ্গিদের আদলে সীমান্তের আস্তানা থেকে ভিডিও বার্তা পাঠান৷ এপারে অপরাধ করলে ওপারে আশ্রয় নেন এবং ওপারে অপরাধ করলে এপারে আশ্রয় নেন৷ সীমান্তের কোনো এক জায়গায় তিনি ঘাপটি মেরে বসে থাকেন৷ আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে হণ্যে হয়ে খুঁজছে৷ কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাচ্ছে না৷

ডয়চে ভেলে: এদের কোনো আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতা কি আপনারা দেখেছেন ?

তোফায়েল আহমেদ : ওদের আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতা আমরা দেখিনি৷ যারা এখানে শরণার্থী হয়ে আসে, তাদের সহযোগিতার নামে এনজিও ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো রাতের আঁধারে ক্যাম্পগুলোতে যায়৷ এসবের মধ্যে কোনো একটা ফাঁক-ফোকর নিশ্চয়ই আছে৷ তা না হলে তারা চুরি করে রাতের আঁধারে কেন সাহায্য করতে ক্যাম্পে যাবে৷ কেন সরকারকে কিছু জানাবে না৷ তারা যদি সহযোগিতা করতে চায়, প্রকাশ্যে করুক৷ কিন্তু গোপনে কেন? এ থেকেই তো বোঝা যায় ওখানে কিছু গলদ আছে৷

ডয়চে ভেলে: এই ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, তারা কি এখানে এসেই অপরাধে জড়ায়, নাকি যারা দীর্ঘদিন এখানে আছে, তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতাটা বেশি?

তোফায়েল আহমেদ : বাংলাদেশকে মিয়ানমার থেকে আলাদা করেছে নাফ নদী৷ এই নদী পার হতে মাত্র আধা ঘন্টা লাগে৷ সন্ত্রাসীরা এপারে অপরাধ করে ওপারে চলে যায়৷ আর ওপারে অপরাধ করে এপারে চলে আসে৷ এই কারণে আমাদের এখানে অপরাধ তৎপরতা কমানো যাচ্ছে না, বরং বেড়ে যাচ্ছে৷

ডয়চে ভেলে: আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এদের সম্পর্কে কতটুকু অবগত?

তোফায়েল আহমেদ : আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এদের ব্যাপারে অবহিত৷ ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই৷ কক্সবাজারের পাবলিক প্রসিকিউটর, অর্থাৎ পিপি আমাদের বলেছেন, কক্সবাজারে যে ফৌজদারি অপরাধ, তার অধিকাংশেরই আসামি রোহিঙ্গারা৷ কোনো রোহিঙ্গা একবার অপরাধ করে কারাগারে যাওয়ার পর জামিন পেয়ে বের হয়ে আসছে৷ কিন্তু তাকে পুশব্যাক বা অন্য কোনোভাবে মিয়ানমারে পাঠানো যাচ্ছে না৷ মিয়ানমার তাকে নেয় না৷ ফলে সে বাংলাদেশেই থেকে যাচ্ছে৷ আবার নতুন করে অপরাধে জড়াচ্ছে৷ তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর কোনো প্রক্রিয়া না থাকায় তারা ভয়ও পায় না৷ রেহাই পেয়ে যাওয়ার কারণে তাদের মধ্যে অপরাধ তৎপরতা বেড়েছে বলে আমার মনে হয়৷

ডয়চে ভেলে: আমাদের স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা কি তাদের কোনো ধরনের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন?

তোফায়েল আহমেদ : রাজনৈতিক নেতারা তাদের প্রশ্রয় দেয়, এটা সত্য নয়৷ রাজনৈতিক নেতারা কেন তাদের প্রশ্রয় দেবেন? তবে হ্যাঁ, একজন ইউপি মেম্বার ও একজন ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ ছিল৷ ওই চেয়ারম্যান বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে ভোটার করে৷ এবং ওই চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় বেশ কিছু রোহিঙ্গা বেপরোয়া হয়ে উঠে৷ আবার জামায়াতে ইসলামীর মতো রাজনৈতিক দল আছে৷ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা এই রোহিঙ্গাদের অপরাধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ এমনকি তাদের প্ররোচনায় রোহিঙ্গারা জঙ্গি হয়ে উঠছে- এমন কথাও আমাদের কানে আসে৷

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে দুর্ঘটনার পর ট্রেন আটকে বিক্ষোভ, তদন্ত কমিটি গঠন

কক্সবাজারের রামুতে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার পাঁচজন যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় কক্সবাজারমুখী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে ...

ইউএনওর ‘স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ’, পদ হারালেন জামায়াত নেতা

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা মডেল কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং উপজেলা জামায়াতের ...

জামিন নামঞ্জুর,ঘুমধুমের ইউপি চেয়ারম্যান কারাগারে

চট্টগ্রামের একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ...